প্রথম ভারতীয় মহিলা সাহিত্য আকাদেমি প্রাপক, উথালপাথাল নারী জীবনের সাক্ষ্মী অমৃতা প্রিতমের আজ প্রয়াণ দিবস :: লিখছেন মৃদুল শ্রীমানি
অমৃতা প্রীতম ( ৩১. ০৮. ১৯১৯ - ৩১. ১০. ২০০৫) :
******************************
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী ১৯৮৭ সালে তাঁকে সাম্মানিক ডিলিট দিয়েছিলেন। এর আগে ১৯৭৩ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ও জব্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডিলিট দিয়েছিলেন। ১৯৮৭ সালে সাহিত্য সংস্কৃতিতে ফরাসি সরকার তাঁকে পুরস্কৃত করেন। ১৯৭৯ সালে বুলগেরিয়ার রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে সাহিত্য পুরস্কারে সম্মানিত করেন।
তিনি অমৃতা প্রীতম। আজ একত্রিশ অক্টোবর তাঁর প্রয়াণ দিবস। ২০০৫ সালে ছিয়াশি বৎসর বয়সে তিনি প্রয়াত হন। আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগে, ১৯১৯ সালে, ৩১ আগস্ট, পঞ্জাবের মাণ্ডি বাহাউদ্দিন এলাকায় অমৃতা কাউরের জন্ম। এখন সে এলাকা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত। তাঁর মা রাজ বিবি ছিলেন বিদ্যালয় শিক্ষক। বাবা কর্তার সিং হিতকারী ছিলেন কবি, সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক। এর সাথে তিনি ছিলেন ব্রজভাষায় পাণ্ডিত্যের অধিকারী। আর শিখ ধর্মের প্রচারক।
১৯৫৬ সালে অমৃতা সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান। সেই প্রথম কোনো ভারতীয় মহিলা ভারতের সাহিত্য আকাদমি সম্মান পেলেন। এরপর ১৯৮২ সালে 'কাগজ তে ক্যানভাস' কাব্যসংগ্রহের জন্য তিনি ভারতীয় সাহিত্যের সর্বোচ্চ সম্মান জ্ঞানপীঠ লাভ করেন। এরমধ্যেই ১৯৬৭ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মান দেন। এরপর ২০০৪ সালে জীবনের উপান্তে এসে তিনি পদ্মবিভূষণ লাভ করেন। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ অবধি তিনি রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন।
অথচ জীবনটা তাঁর কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। ১৯৩৬ সালে মাত্র ১৬ বৎসর বয়সে অমৃতার বিবাহ হয়েছিল প্রীতম সিং এর সঙ্গে। প্রীতম সিং ছিলেন সাহিত্য সম্পাদক। কিন্তু বিবাহটি সুখের হয় নি। ১৯৬০ সালে তিনি স্বামীর সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক ছেদ করেন। কবি শাহির লুধিয়ানভির সাথে অমৃতার একতরফা প্রেম ছিল। এই প্রেমের কাহিনী তাঁর আত্মজীবনীমূলক রচনা 'রশিদি টিকেট' এ ধরা পড়েছে। শাহিরের জীবনে জনৈক সঙ্গীত শিল্পী সুধা মলহোত্র এসে গেলে অমৃতা ইমরোজ নামে একজন লেখক শিল্পীর সঙ্গে বসবাস শুরু করেন।
ছিয়াশি বছরের জীবনের শেষ চল্লিশটি বছর তিনি ইমরোজের সাহচর্যে কাটিয়েছেন। তাঁর উথাল পাথাল নারীজীবন ধরা পড়েছে ১৯৬৮ সালে লেখা ব্ল্যাক রোজ এবং ২০০৪ সালে অক্ষরোঁ কে সায়ে রচনায়।
এগারো বৎসর বয়সে অমৃতা মাতৃহারা হয়ে নিঃসঙ্গতায় ভুগতেন। এটাই তাঁকে কবিতার দিকে ঠেলে দিয়েছিল। কিশোরীবেলায় লেখালেখি করতে করতেই সাহিত্য সম্পাদক প্রীতম সিংয়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা। ১৯৩৬ সালে বিবাহের বৎসরে অমৃতার প্রথম কাব্য সংকলন 'অমৃত লহরেঁ' প্রকাশিত হয়। এরপরে ১৯৩৯ সালে জিউন দা জীবন , ১৯৪২ সালে ত্রেল ধতে ফুল, ও গীতাঁ ভালিয়া , ১৯৪৩ সালে বদলাম দে লালি ও সাঁঝ দে লালি, ইত্যাদি মোট ছয়টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
যদিও রোমান্টিক কবি হিসেবেই অমৃতা তাঁর সাহিত্যজীবন শুরু করেছিলেন, সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনের অন্তিমপর্বে ভারতীয় উপমহাদেশের সাধারণ মানুষের অসহনীয় জীবনযাত্রা তাঁর কলমের পরবর্তী অভিমুখ নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল। ১৯৪৩ এর বাংলার দুর্ভিক্ষ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার তীব্র অভাব, বেকারত্ব, হতাশা তাঁর কলমকে মানুষের কথা বলতে বাধ্য করল। ১৯৪৪ এ 'লোকপীড়' কাব্যগ্রন্থে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কঠোর সমালোচনা করেছেন।
এভাবেই তিনি প্রগতিশীল সাহিত্য আন্দোলনে জড়িত হন। 'গরম হাওয়া (১৯৭৩)' খ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এম এস সথ্যু "এক থি অমৃতা" নামে একটি অসামান্য থিয়েটারে প্রগতিশীল সাহিত্যিক অমৃতাকে চিত্রিত করেছেন।
১৯৪৭এ উপমহাদেশে এল খণ্ডিত স্বাধীনতা। আঠাশ বছরের তরুণী অমৃতা উদ্বাস্তু হলেন। তখন তিনি গর্ভবতী। তিনি ভারতে আশ্রয় চেয়েছিলেন। ভারতীয় উপমহাদেশে দেশভাগ ও উদ্বাস্তুদের উপর অত্যাচার একধরণের প্রতিবাদী সাহিত্যের জন্ম দিয়েছে। দেশবিভাগ ও উদ্বাস্তু যন্ত্রণা অমৃতার কলমে কবিতা জন্ম দিয়েছে। "আজ আখন ওয়ারিশ শাহ নু", আজ আমি ওয়ারিশ শাহের কাছে প্রশ্ন তুলছি। ওয়ারিশ শাহ ছিলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর এক সুফি কবি ও সাধক। তিনি অমৃতার জন্মস্থান এলাকায় জন্মেছিলেন। মঈনুদ্দিন চিস্তি ঘরাণার এই সুফি কবি হীর ও রঞ্ঝাকে নিয়ে বিয়োগবিধুর কাব্য লিখেছিলেন।
অমৃতা ১৯৬১ সাল অবধি দিল্লির অল ইণ্ডিয়া রেডিওতে কাজ করেছিলেন। ১৯৬০ সালে চল্লিশ বছর বয়সে প্রীতম সিংয়ের সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদের পর অমৃতা নারী জীবনের প্রতি বঞ্চনা ও আক্রমণের বিরুদ্ধে বিশেষ ভাবে সরব হন। নিজের দাম্পত্য জীবনের তিক্ত গরল অভিজ্ঞতা তাঁর কলমকে নারীবাদের সপক্ষে মুখরিত করেছিল। তাঁর জীবিতকালেই তাঁর লেখা ইংরেজি, ফরাসি, ডেনিশ, জাপানি, মান্দারিন ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
অমৃতার কলমে জন্ম নেওয়া সাহিত্য চলচ্চিত্রায়িতও হয়েছে। ১৯৬৫ সালে ধরতি সাগর তে সিপ্পিয়াঁ থেকে কাদম্বরী ফিল্ম তৈরি হয়। এরপর ১৯৭৬ সালে উনা দি কাহিনী থেকে পরিচালক বাসু ভট্টাচার্য ডাকু নামে ফিল্ম তৈরি করেন। ২০০৩ সালে তাঁর 'পিঞ্জর' উপন্যাস অবলম্বনে চন্দ্রপ্রকাশ দ্বিবেদী দেশভাগের সূত্রে হিন্দু মুসলিম সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ নিয়ে ওই একই নামে ফিল্ম তৈরি করেন। এই ফিল্মটি বিভিন্ন পুরস্কারে সম্মানিত হয়।
অমৃতা প্রীতম 'নাগমণি' নামে পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। পত্রিকাটি তেত্রিশ বছর ধরে সহযোগী লেখক শিল্পী ইমরোজের সাথে পরিচালনা করেছেন।
অমৃতা প্রীতম বলেছিলেন, শুধুমাত্র হিংসা থামানোই শান্তি নয়, শান্তি হল ফুল ফুটিয়ে তোলার পরিবেশ গড়ে তোলা। বলেছিলেন, ওয়ারিশ শাহ, তুমি কবর থেকে উঠে এসে আরো একটা প্রেমের বই লেখো। লক্ষ লক্ষ মেয়ে প্রেম পেতে চেয়ে কাঁদছে।
;
পুজো কমিটিগুলিকে ৫০ হাজার টাকা অনুদান সরকারের
প্রান্তভূমি প্রতিনিধি ।। প্রতি পুজো কমিটিকে পঞ্চাশ হাজার ( ৫০,০০০ )টাকা দিয়ে সাহায্য করছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৪ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করেন যে এই বছর প্রত্যেক পুজো কমিটিকে এই সাহায্য করা হবে। এদিন দুর্গা পুজো কমিটির কর্মকর্তাদের সাথে ভার্চুয়াল বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যব্যাপী এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২৪ সেপ্টেম্বর সালানপুর ব্লকের পুজো কমিটিগুলির কর্মকর্তারাও যোগ দেন এই বৈঠকে। সালানপুর থানায় ব্লকের চব্বিশটি অনুমতিপ্রাপ্ত এবং তিনটি অনুমতি না পাওয়া পুজো কমিটির কর্মকর্তাবৃন্দ এসেছিলেন। উপস্থিত ছিলেন সালানপুর আই সি পবিত্র কুমার গাঙ্গুলী, রূপনারায়ণপুর ও সি সিকন্দার আলম এবং কল্যানেশ্বরী ওসি অমরনাথ দাস।
করোনা আবহের মধ্যে উৎসবের আনন্দ উপভোগে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য বেশকিছু নিয়মের কথা এদিন স্মরণ করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। প্যান্ডেলের চারদিক খোলা থাকবে । প্রবেশ ও প্রস্থানের পথ থাকবে আলাদা । প্যান্ডেলে স্যানিটাইজার ও মাস্ক রাখা বাধ্যতামূলক। ভিড় নিয়ন্ত্রণে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে হবে। পুষ্পাঞ্জলি একসঙ্গে বেশি মানুষ দিতে পারবেন না। পাঁচজন বা দশজন আলাদা আল;